সে নাকি আকারে ছোট। তবে তাই বলে অবহেলা করবেন না, প্লিজ। কথায় আছে, ছোট মরিচের ঝাল বেশি থাকে। এবার সেটাই প্রমাণ করে দিল তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু।
এবার প্রমাণিত হয়েছে যে দূরত্ব কম হলেই তা কম সময়ে পাড়ি দেওয়া যায় না। যদি গাড়িতে দ্রুত যাওয়া যায়, তবে যান বদলে রিকশা নিয়ে সময় বেশি লাগানোই যায়। আরও বেশি সময় লাগাতে চাইলে প্রয়োজনে হাঁটা যায় বা গড়িয়েও যাওয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন, যেখানে দীর্ঘসূত্রতাই বড় কথা, সেখানে গাড়ি, রিকশা বা পদব্রজ—এগুলো কোনো বিষয়ই নয়।
সে যাকগে। এবার তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরে জানা গেছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১০ সালে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এ সেতুর দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ২ কিলোমিটার। আকারে এটি তুলনামূলক ছোট। নদীর পরিস্থিতি অনুকূল থাকার পরও এ সেতুর কাজ এখনো শেষ হয়নি।
১০ বছরেও কেন তুলনামূলক ছোট এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলো না, তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা গেছে, এ প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের টানাপোড়েন ও খামখেয়ালির কারণেই দেরি হয়েছে। আর সেই টানাপোড়েন ও খামখেয়ালির মূল্য দিতে হয়েছে প্রকল্পটির ব্যয় ও মেয়াদ বাড়িয়ে। জনগণের দুর্ভোগের কথা আর না বলি। কারণ, বর্তমান বাস্তবতায় সেটি থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারের মতো!
কটু থামুন ডেস্কের সঙ্গে এক একান্ত, ঘনিষ্ঠ ও নিবিষ্ট সাক্ষাৎকারে ছোট্ট সেতুটি আধো আধো বোলে (যেহেতু এখনো সম্পূর্ণ হয়নি) জানিয়েছে, পুরোপুরি ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই এ দেশের মানুষের প্রকৃতি সে বুঝে গেছে। এখানে দাম বাড়ানোই যে আসল কথা, সেই সত্য অনুধাবন করতে পেরেছে সে।
তা মেয়াদ ও ব্যয় কতটা বাড়ল ? খবরে প্রকাশ, ২০১৩ সালের মধ্যে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। এবার আজকের ক্যালেন্ডার দেখে নিন। তাহলেই বুঝবেন কত দেরি হলো। আর সেই বিলম্বের সুতা কিন্তু আরও লম্বাই হবে। কারণ, রাতারাতি তো আর সেতু মাথা তুলে দাঁড়াবে না।
এবার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি দেখা যাক। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু প্রকল্পটি পাস করার সময় এর ব্যয় ধরা হয় ৩৭৭ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় এ প্রকল্প এখন ৬১০ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। খরচ বেড়েছে ২৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে ৬২ শতাংশ। ভাবুন একবার, ৩৭৭ কোটি টাকার সেতুর ‘দাম’ কীভাবে বেড়ে গেল! নিজের দাম বাড়াতে চাইলে কিন্তু তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুই হতে পারে আপনার জন্য একমাত্র দৃষ্টান্ত।
সেতুটিও নাকি সে কথাই বলছে। একটু থামুন ডেস্কের সঙ্গে এক একান্ত, ঘনিষ্ঠ ও নিবিষ্ট সাক্ষাৎকারে ছোট্ট সেতুটি আধো আধো বোলে (যেহেতু এখনো সম্পূর্ণ হয়নি) জানিয়েছে, পুরোপুরি ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই এ দেশের মানুষের প্রকৃতি সে বুঝে গেছে। এখানে দাম বাড়ানোই যে আসল কথা, সেই সত্য অনুধাবন করতে পেরেছে সে।
আর এ কারণেই ১০ বছরেও গায়ের ওপর যানবাহন না ওঠায় সেতুটির মন খারাপ হয় না। বরং নিজেকে ‘ভিআইপি ভিআইপি’ মনে হয়ে বলে জানিয়েছে সেতুটি। জীবিত–মৃতের হিসেবে জড় বস্তুটির ভাষায়, ‘পিলারের ওপর স্ল্যাব থাকা ভালো। তবে শুধু পিলার থাকা আরও ভালো। ব্যয় বাড়লেই দাম বাড়বে। আমি চাই হাজার কোটির সেতু হতে। সবার খামখেয়ালিপনা টিকে থাকুক। সম্পর্কে থাকুক হিন্দি সিরিয়ালের টানটান টানাপোড়েন। নিশ্চয়ই একদিন আমার স্বপ্ন সত্যি হবে, আসবে সেই সোনালি দিন।’
সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, প্রকল্পের সার্বিক কাজ এখনো ২৫ শতাংশ বাকি। এ কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য চিঠি গেছে।
এদিকে এ খবর জানতে পেরে সেতুটি একটু আতঙ্কিত। তার ভাষায়, এতদিন যে গতিতে কাজ হয়েছে, তাতেই আগানো উচিত। এমনকি আরও ধীরগতিতে এগোনো যেতে পারে। হুট করে অভ্যাস বদলে গতি বেশি হলে কাজে হতে পারে গড়বড়। সুতরাং অযাচিত ঝুঁকি নেওয়া কি উচিত হবে? ১০ বছর তো গেছেই, যাক না আরও ১০, ক্ষতি কী?
তাই তো। ক্ষতি আর কী! কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি এই ছোট্ট সেতুটির কাতর আরজি শুনবে? প্রাণ নেই বলে সেতুটির আশৈশবের লালিত স্বপ্ন কি পূরণ হবে না?
আগামী কয়েক বছরের খবরের কাগজে নিশ্চয়ই এর উত্তর পাওয়া যাবে !
সূত্র : প্রথম আলো
Discussion about this post