বিশেষ প্রতিনিধি :
নারাণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি রপবতানিমূখী পোশাক প্রস্তুতকারক গার্মেন্ট শিল্প কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গার্মেন্টসের বেশ কয়েকটি কক্ষে ব্যাপক ভাংচুর ও কারখানার জিএমসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে মারধর করে।
মালিকপক্ষের লোকজন পাল্টা শ্রমিকদের মারধর করলে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে শিল্প পুলিশ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ কারখানায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার দুপুরে সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সুমিলপাড়া এলাকায় মুনলাক্স কম্পোজিট নীট লিঃ গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ ও ভাংচুরের এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও শ্রমিকরা জানায়, রবিবার রাতে মুনলাক্স কম্পোজিট নীট লিঃ গার্মেন্টস কারখানার অপারেটর আমিনুল ইসলামকে মালিকপক্ষ বিনা নোটিশে ছাঁটাই করে। সোমবার সকালে অন্যান্যরা শ্রমিকরা কারখানায় যোগদান করতে এসে এ খবর জানতে পারে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসনেআষ সৃষ্টি হয়। দুপুরে শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে কর্মবিরতি দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ জানিয়ে কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করতে থাকে। ছাঁটাইকৃত ওই শ্রমিককে পুনর্বহালের দাবি জানায় তারা। পরে শ্রমিকরা আমিনুলের ছাঁটাইয়ের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা হুমায়ুনকে অনুরোধ করে। কিন্তু সে ছাঁটাইয়ের আদেশ প্রত্যাহার না করে শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গার্মেন্টসের অফিস কক্ষ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষ ও কনফারেন্স কক্ষের কাঁচ ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে। পরে শ্রমিকরা গার্মেন্টসের জিএম মনির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে মালিকপক্ষের লোকজন শ্রমিকদের পাল্টা মারধর করলে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১৫জন আহত হন। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মালিকদের সাথে কথা বলে শ্রমিকদের শান্ত করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আহত জিএম সহ অন্যান্য স্থানীয় বিভিন্ন বসেরকারি ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
শ্রমিকরা জানায়, গার্মেন্টসের প্রশাসনিক কর্মকর্মা হুমায়ুন সোবারর বহিরাগত লোক এনে শ্রমিক আমিনুলকে গার্মেন্টসে রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত আটক করে রাখে এবং হুমকি দিয়ে তাকে ছাঁটাই করে দেয়। সোমবার সকালে শ্রমিকরা আমিনুলের ছাঁটাই আদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনিক কর্মর্কর্তা হুমায়ুনকে অনুরোধ করলে তিনি শ্রমিকদের গালমন্দ করতে থাকে। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে গার্মেন্টসে ভাংচুর চালায়।
তবে মুনলাক্স কম্পোজিট নীট লিঃ এর মালিক মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গার্মেন্টসে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। তিনি বলেন, ঐ শ্রমিক স্বেচ্ছায় এ মাসের পর চাকুরি করবে না বলে জানানোর পর তার পাওনাদি তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে কাউকে ছাঁটাই করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক জানান, ছাঁটাইকৃত শ্রমিককের পুনর্বহালের দাবিতে শ্রমিকরা ভাংচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ-৪ এর পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সৈকত শাহীন জানান, এক শ্রমিককে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কারখানায় ভাংচুর করেছে। ওই ছাঁটাইকৃত শ্রমিক তাদের নেতা। পরে শ্রমিকরা কারখানার জিএমকে মারধর করে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশের ২ জন এএসপি ও ২ জন পরিদর্শকের নেতৃত্বে শিল্প পুলিশের ৪০ জনের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
তিনি জানান, শ্রমিকদের দাবি ব্যাপারে মালিকপক্ষ আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা শান্ত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
Discussion about this post