বর্তমান সময়ে বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের নানা অপকর্ম প্রকাশের আবারো উঠে এসেছে মাকসুদ চেয়ারম্যানের বড় ভাই আনোয়ার ওরফে আনারের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য । আনোয়ার ওরফে আনার তৎকালীন সময়ে নির্বাচনে জয়লাভের পর লাংগলবন্ধ এলাকায় শালিসি বৈঠকে প্রেম করার অপরাধে এক সনাতন ধর্মাবলম্বীর যৌনাংগে ইট বেঁধে পংগু করে দেয়ার ঘটনায় উচ্চ আদালত স্বপ্রণদিত হয়ে রুল জারি করে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আনোয়ার ওরফে আনারকে স্বশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত । আদালতের নির্ধারিত সময়ে হাজির হবার কয়েক ঘন্টা পূর্বে বন্দরের কুক্ষাত আরেক অপরাধী সেলিমের মটর সাইকেল থেকে পরে রহস্যজনকভাবে মারা যায় চেয়ারম্যান আনোয়ার । এমন মৃত্যুর পর আর উচ্চ আদালতে হাজির হতে হয় নাই কারোর ই । আর তাতেই চেয়ারম্যানের চেয়ার পেয়ে যায় মাকসুদ।
এমন মৃত্যুর ঘটনায় বন্দরের অনেজেই বলেছেন, প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের সাথে গোপনে চুক্তি করে আনোয়ার ওরফে আনার চেয়ারম্যানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মাকসুদ । আনার চেয়ারম্যান রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়ে তৎকালীন সময়ে কয়েকটি স্থানীয় দৈনিকে “সেলিমের কোটি টাকার মিশন” নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের কারনে এমন মৃত্যুর রহস্য আজও উদঘাটন হয় নাই । অনেকেই আরো বলেছেন, আনার ও মাকসুদের বাবা রফিক চেয়ারম্যান যতটা দুর্ধর্ষ ছিলো তার চাইতে তার ছেলেরা (আনার, মাকসুদ) কোন অংশেই কম দুর্ধর্ষ না !
প্রভাবশালী সংসদ সদস্য যখন মাকসুদ চেয়ারম্যানের পাশে থাকায় কেউ মুখ খুলতেও সাহস করে না ।
(কয়েকজনের এমন বক্তব্য রেকর্ডসহ তথ্য নিয়ে আসছে আরো বিস্তারিত )
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
সংসদ সদস্যের ছত্রছায়ায় মাকসুদ চেয়ারম্যান রাজাকারের সন্তান হয়েও তাকে পাশ করানোর জন্য নৌকাকে ফেল করানো হয়। আমি চাই নারায়ণগঞ্জের এই রাজাকারের সন্তানকে সেখান থেকে নামানোর জন্য এই নারায়ণগঞ্জে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হোক। আর এই রাজাকারদের দোসরদের যারা ছত্রছায়া দিবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ইনশাআল্লাহ্ আগামীতে ব্যবস্থা নিব।
মেয়র আইভীর এমন বক্তব্যের পর নতুন প্রজন্মের আগ্রহ এখন বন্দরের ধামগড় ইউনিয়নে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি সমর্থক প্রার্থী মাকসুদ হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের আব্দুল কাদির।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক বই এবং গবেষনাগ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, মাকসুদ চেয়ারম্যানের বাবা অবিভক্ত ধামগড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ রফিক ছিলেন দুর্ধর্ষ রাজাকার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে শান্তি কমিটিতে যোগ দিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। রফিক চেয়ারম্যানের বাবা মাইনুদ্দিন এবং দুই ভাই আব্দুল মালেক ও আব্দুস সামাদও রাজাকার ছিলেন। স্বাধীনতার পরও ধামগড় ইউনিয়নে এই রাজাকার ও তাদের পরিবারের লোকজনদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত ছিল। তাদের এই দুর্ধর্ষ কর্মকান্ড নিয়ে ২০০১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক জনকন্ঠ এ ‘নারায়ণগঞ্জ ৩০ বছরেও রফিক বাহিনীর সন্ত্রাস কমেনি, ধামগড়ের মানুষ আতঙ্কিত’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি হুবুহু তুলে ধরা হলো।
জনকণ্ঠ থেকে নেয়া (১৯-০২-২০০১ তারিখের সংখ্যায় প্রকাশিত) : ৩০ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে দেশ। কিন্তু এখনও আধিপত্য কমেনি বন্দর থানার ধামগড় এলাকার কুখ্যাত রাজাকার রফিক চেয়ারম্যানের । তার বাহিনীর ভয়ে এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অসংখ্য নৃশংস হত্যাকান্ড হতো এই রফিক রাজাকারের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী ছেলেরা ঘটিয়ে যাচ্ছে একের পর এক হত্যাকান্ড। রাজাকারের ছেলে বলার অপরাধে কয়েক বছর আগে বন্দর থানার কুড়িপাড়া বাজারে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মুক্তিযােদ্ধা আলাউদ্দিনকে । এখনও ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অপহরণ- এমন কোন অপকর্ম নেই যা করছে না তার সন্ত্রাসী। ছেলেরা। সন্ত্রাসী ছেলেদের নেতৃত্বে রয়েছে এই ঘৃণিত রাজাকার। রাজাকার রফিক বাহিনীর আতঙ্কে এখনও দিন কাটায় ধামগড় ইউনিয়নের মানুষ। তার ছেলেরা যা খুশি তা-ই করে। ভয়ে টু শব্দ করে না মানুষ। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বন্দর থানার ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিল এমএ রফিক। সে হাত মিলায় পাকহানাদার বাহিনীর সাথে। স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হয়। মেতে ওঠে হত্যার উৎসবে ।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ একদিনেই তার নেতৃত্বে হত্যা করা হয় এলাকার ৪ নিরীহ লোককে। তার হাতে ঐদিন নৃশংসভাবে খুন হয় ধামগড় গ্রামের বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন, আমিন উদ্দিন, মতি মিয়া ও আঃ হামিদ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ঘৃণিত রাজাকারের বাহিনী আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয় ১৩টি গ্রাম। ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে রাজাকার রফিকের বাহিনী গুলি করে হত্যা করে ধামগড় গ্রামের নূর ইসলাম, নয়ামাটি গ্রামের আবদুল হামিদ, ইদ্রিস আলী, লালখারবাগ গ্রামের ইদ্রিস আলী, কুটিরবন্দ গ্রামের আবুল হাশেম, মোছেরছড়া গ্রামের জলিল মিয়া ও হরিপুরের বীর মুক্তিযােদ্ধা আবদুল আজিজকে। পিস কমিটির চেয়ারম্যান রফিকের নেতৃত্বে ছালামত, খালেক, মিন্নত আলী, আবদুস সালাম, গোলাম মাওলা, আলী হোসেন প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত রাজাকার বাহিনী তান্ডব চালায় ধামগড় ইউনিয়নে। এখনও অনেকে এই ঘৃণিত রাজাকার বাহিনীর নৃশংসতার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে।
স্বাধীনতার পর ভোল পাল্টায় রাজাকার রফিক। কিছুদিন আত্মগোপনের পর আবার ফিরে আসে এলাকায় আবির্ভূত হয় স্বরূপে। গড়ে তোলে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। ছলে বলে কৌশলে নির্বাচিত হয় ধামগড় ইউপি চেয়ারম্যান। আবার অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে এই কুখ্যাত রাজাকার। কয়েক বছর আগে রাজাকার রফিকের সন্ত্রাসীরা কুড়িপাড়া বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনকে। আলাউদ্দিনের অপরাধ, তিনি রফিকের ছেলেকে বলেছিলেন- ‘রাজাকারের ছেলে’। এই নৃশংস হত্যাকান্ড চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে বন্দরে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বন্দর কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন, মিছিল-মিটিং পর্যন্ত করে। আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসে রাজাকার রফিক ও তার সন্ত্রাসীরা। রাজাকার রফিক বিয়ে করেছে ৪টি। ৪ পক্ষে তার ছেলে রযেছে ৮ জন। প্রায় সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। রাজাকার রফিকের দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় ছেলে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ, অবৈধ অস্ত্র রাখা প্রভৃতি অপরাধে ৮টি মামলা রয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ গ্রেপ্তার করে দৃর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসীকে। বন্দর থানা-পুলিশ জানিয়েছে, এর আগেও তাকে অনেকবার গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিবারই জামিনে বেরিয়ে এসে এলাকায় কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। দ্বিতীয় স্ত্রীর তৃতীয় ছেলে মুর্শেদ ওরফে মুন্সীও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুেেদ্ধ অসংখ্য মামলা রয়েছে বন্দর থানায়। চতুর্থ চেলে মোয়াজ্জেম ওরফে কালুর বিরুদ্ধে রয়েছে ২ হত্যাসহ ৯টি মামলা।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, রাজাকার রফিকের অন্যান্য ছেলেও সন্ত্রাসী। তাদের ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটায় এলাকার মানুষ। মানুষের জমিজমা দখল করে এখন অগাধ সম্পত্তির মালিক রাজাকার রফিক। স্থানীয় মিলকারখানায় একচ্ছত্র আধিপত্য। এসব মিলকারখানায় ঠিকাদারি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই পরিচালিত হয় তার ইচ্ছায় । দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু নীতিভ্রষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ব্যবসায়িক সুবিধা নেয়ার জন্য পরিণত হয়েছে এই ঘৃণিত রাজাকারের চাটুকারে। এই রিপোর্টে যা তুলে ধরা হয়েছে, তা কুখ্যাত রাজাকার রফিকের অপকীর্তির সামান্য। অংশমাত্র। দেশ ৩০ বছর আগে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এখনও এই কুখ্যাত রাজাকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পায় মানুষ।
জনকণ্ঠ। ১৯-০২-২০০১।
Discussion about this post